ফের তেঁতে উঠেছে সন্দেশখালি। দফায়-দফায় উত্তেজনার আগুন ছড়িয়েছে বেশকিছু এলাকায়। শেখ শাহজাহান, তাঁর ভাই সিরাজুদ্দিন, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরেছেন সাধারণ মানুষ। এদের সকলের বিরুদ্ধে উঠেছে জমি দখল সহ একাধিক অভিযোগ।
শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
শাহজাহান বিতর্ক; আগাম জামিনের বিরোধিতায় ইডি
শহজাহানকে ঘিরে বিতর্ক ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শাহজাহান ক্ষমতাবান। ১৫ মিনিটে ৩ হাজার লোক জড়ো করে ফেলেন। আগাম জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে দাবি ইডির। এদিন আদালতে ফেরার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের আগাম জামিনের বিরোধিতা করে ইডি। ইডি বলে, শাহজাহান এখনও রাজনৈতিক পদে রয়েছেন। ব্লু আইড বয়। টক অব দ্য টাউন। রয়েছে পুরোনো অপরাধের রেকর্ডও। খুনের ধারাতে মামলার পরেও গ্রেফতার হননি শাহজাহান। এর পাশাপাশি সরকারি দফতরে হামলার ঘটনাতেও শাহজাহানের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর এই মামলাতেই পুলিসের তরফে তাঁকে ফেরার ঘোষণা করা হয়েছে।
ইডি এদিন আরও বলে যে, আগাম জামিনের বিরোধিতা করছি কারণ, জামিন পেলে শাহজাহান যদি লন্ডনে চলে যান, তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলা ভেস্তে যেতে পারে। তাই তাঁকে আসতে দিন। দোষী না হলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন? আমরা তদন্তে করতে তার বাড়িতে যাই। তার বাড়ি দু-দিক থেকে বন্ধ ছিল। আমরা ফোন করি। দু-বার ফোন ধরে। আমরা নিজেদের পরিচয় দিই। তারপরই ফোন কেটে দেয়। তারপর থেকে ফোন ব্যস্ত ছিল। তারপর ১৫-২০ মিনিটে ১০০০ লোক চলে আসে। আমরা প্রবেশ করতে পারিনি। যখন সেই ঝামেলা শুরু হয়, পুলিস পৌঁছয়। অফিসারদের উদ্ধার করে। তিনজন আহত হয়। একজন গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনায় ইডির অভিযোগে ন্যাজাট থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। তার আগে পুলিস একটি সু্য়োমোটো এফআইআর করে। পুলিসের এফআইআর অনুযায়ী, ৩০০০ মতো লোক ছিল। তখন যা পরিস্থিতি ছিল, তাতে কতজন লোক ছিল সেটা আমাদের পক্ষে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কিন্তু খোদ পুলিসের স্বতঃপ্রণোদিত মামলাতেই উল্লেখ ৩০০০ লোক জড়ো হয়েছিল। ৫০ দিন ধরে পলাতক শাহজাহান শেখ। পুলিস তাকে ধরছে না। আমরা জানি না কেন। এদিকে টাওয়ার লোকেশন থেকে আমরা জানতে পারি যে তিনি সেখানে ছিলেন। ইডিকে আটকাতে পুরো আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।
এর পরে শাহজাহানের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন যে, ৩ ফেব্রুয়ারি আগাম জামিনের আবেদন করে। এরপরই আমার বাড়ি টার্গেট করে। গ্রামবাসীরা টার্গেট করে। তাহলে সেই একই গ্রামের লোকেরা কীভাবে ইডিকে আটকাতে আসবে? এমন কী ঘটল যে পুরো বিষয়টা বদলে গেল? গ্রামের লোকরা তার গ্রেফতার চাইতে শুরু করল ? যদি আমি তাদের জড়ো করে থাকি ইডিকে আটকাতে, তাহলে পরে তারা আমার বাড়ি কেন ভাঙতে আসবে? এটা সারপ্রাইজ অ্যাটাক হলে তাহলে আমার জানার কথা নয় যে এই লোকগুলো আসছে। সেটা আমার জানার কথা নয়! মব হ্যাজ রাইট টু রিয়্যাক্ট।
সন্দেশখালি যাওয়ার পথে গ্রেফতার লকেট, সিঙ্গুরে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধে বিজেপির
শিবু-উত্তমরা ইতিমধ্যে গ্রেফতার হলেও এখনও অধরা সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান। গত রাতে সন্দেশখালি থানার সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে দেখা য়ায় পদ্ম শিবিরের লোকজনকে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। গ্রেফতারও হন। এবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে গ্রেফতার হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রতিবাদে সিঙ্গুরে তুমুল বিক্ষোভে বিজেপি।
সূত্রের খবর, এদিন প্রথমে লকেটকে আটক করে পুলিশ। তারপর গ্রেফতার করা হয়। তাতেই তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপির লোকজন। সিঙ্গু্রের বড়া এলাকায় শ্রীরামপুর থেকে বড়া যাবার রাস্তায় টায়ার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শুরু হয় তীব্র বিক্ষোভ। পথ অবরোধ শুরু করেন সিঙ্গুর বিধানসভার বিজেপি কর্মীরা। ব্যাপক যানজটও তৈরি হয়। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ গোটা এলাকা। শেষে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।
বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, অত্যাচারি শাহজাহানকে পুলিশ গ্ৰেফতার করছে না। কিন্তু, বিরোধী দলকে এলাকায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা লজ্জার বিষয়। সুর চড়াতে দেখা যায় এলাকার বিজেপি নেতাদেরও।
বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
গ্রেফতার সুকান্ত; পরে জামিনে মুক্তি দিল পুলিশ
এদিন সন্দেশখালি থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার সুকান্ত মজুমদার। সেখান থেকে রাজ্য বিজেপির সভাপতিকে সরিয়ে লঞ্চে করে পুলিশ নিয়ে গেল ধামাখালিতে। নদীতে এই যাত্রার সময়েই ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় সুকান্তকে।
'একটা অফিসারের জন্য সরকারের মুখ পুড়বে কেন?' বৈঠকে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
"একটা অফিসারের কাজের জন্য কেন সরকারের মুখ পুড়বে?" সরকারি অফিসারদের কাজ নিয়ে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসী সংগঠন গুলোর সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন একাধিক আধিকারিকদের কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর।
তিনি বলেন, "কিছু অফিসার আছে যারা কাজ করে না সঠিক সময়ে। একটা অফিসারের জন্য কেন সরকারের মুখ পুড়বে?
শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়ে স্কুল শিক্ষা দফতর। "স্কুল শিক্ষা দফতরেরও খামতি আছে।" বিরোধীদের উদ্দেশ্যেও তিনি বলেন, "শিক্ষক নিয়োগই তো করতে দিচ্ছে না। এখানে বিজেপির কয়েকজন বসে আছেন। তারা পিল করছেন আর অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন। যখন তোমার হাতে কিছুই নেই, তখন প্যারা টিচারদের নিয়ে কাজ চালাতে হবে।"
লোকসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আদিবাসী সংগঠন। বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনগুলির সঙ্গে তাই আজ বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কুর্মিদের প্রতিনিধি-সহ একাধিক সংগঠন ছিল এই বৈঠকে। জঙ্গলমহল সফরের আগেই আদিবাসী সংগঠনগুলির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
লাঠি হাতে মারমুখী মহিলারা; পালালেন শাহজাহানের ভাই
এলাকার লোকেদের ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে সন্দেশখালি। এবার শেখ শাহজাহানের ভাইয়ের ভেড়ির আলঘরে আগুন লাগিয়ে জোর বিক্ষোভ। লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে ফের বিক্ষোভ গ্রামের মহিলাদের। মারমুখী মহিলাদের বিক্ষোভে বাইক নিয়ে পালালেন তৃণমূল নেতার ভাই। তাঁর বিরুদ্ধেও রয়েছে ভেড়ি দখল সহ একাধিক অভিযোগ।
শাহজাহানের মেজো ভাই শেখ সিরাজউদ্দিন সন্দেশখালির ২ নম্বর ব্লকের বেড়মজুরের ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝুপখালির বাসিন্দা।
এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে উত্তেজিত জনতা আলঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ডিআইজি বারাসতের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা পুলিশকর্মীদের ঘিরে ধরেন। শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। ডিআইজি বারাসত দখল হয়ে যাওয়া জমি, দোকানঘর, ভেড়ি দখলমুক্ত করার আশ্বাস দেন। তার পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের নতুন করে থমথমে সন্দেশখালি। যাতে আর নতুন করে কোনও অশান্তি না হয়, তাই গ্রামে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ইডি-র বিরুদ্ধে আদালতে মহুয়া!
পরপর দুটি নোটিস পাওয়ার পর ইডি-র বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বিদেশে আর্থিক বেনিয়মের মামলায় ইতিমধ্যে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেত্রীর। ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট বা ফেমা আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে এই খবর। সেই ইস্যুতে এবার ইডির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নেত্রী।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দিল্লিতে ইডি-র সদর দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। হাজিরা না দিয়ে মহুয়া মৈত্র এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন ইডি-র কাছে। সেই এক সপ্তাহ পেরনোর আগে ফের চিঠি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। গত সোমবার রাতেই ফের মহুয়াকে নোটিস পাঠায় ইডি। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেবন তিনি। শুধুমাত্র ইডি নয়, এই অভিযোগে মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই-ও।
কিছুদিন আগেই আরও এক বিতর্কে নাম জড়ায় মহুয়া মৈত্রের। মূল্যবান উপহারের বিনিময়ে ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কথায় লোকসভায় প্রশ্ন করার অভিযোগ ওঠে নেত্রীর বিরুদ্ধে। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সেই অভিযোগ সামনে আনেন। পরে ওই ইস্যু খতিয়ে দেখে এথিক্স কমিটি। কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে স্পিকারের কাছে। পরে কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী, মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়।