সাড়ে ৯ ঘণ্টায় শেষ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট। ভারত জিতল ৮ উইকেটে। কেপ টাউনে দুই দলের পেসারেরা মিলেই সব উইকেট তুলে নিলেন। স্পিনারদের বলই করতে হয়নি। এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে শেষ করে দেওয়া ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে গিয়েছিল ১৫৩ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৬ রানে অলআউট করে দিলেন যশপ্রীত বুমরারা। ৭৯ রানের লক্ষ্য মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ভারত ম্যাচ জিতল ৭ উইকেটে।
প্রথম ইনিংসে মহম্মদ সিরাজের আগুনে বোলিংয়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। যেন গতবছরের এশিয়া কাপ ফাইনালের হাইলাইটস! কেপটাউনের টস জিতে প্রথমে ব্য়াট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা ডিন এলগার। তবে রোহিত শর্মাকে মনে হয় কানে কানে সিরাজ বলে দিয়েছিলেন যে, ভয়ংকর খেলা হবে...। আর সেটাই করলেন সিরাজ। প্রতিপক্ষকে একা দায়িত্ব নিয়ে শেষ করে দিলেন। সিরাজ একাই তুলে নিয়েছিলেন হাফ ডজন উইকেট। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন প্রোটিয়া ব্য়াটিং লাইন আপ। ৯ ওভার বল করে দেন মাত্র ১৫টি রান।
ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১৫৩ রানে। রোহিত (৩৯), শুভমন (৩৬) ও কোহলি (৪৬) ছাড়া আর কোনও ব্য়াটারই মুখ তুলে দাঁড়াতে পারেননি। হাফ ডজন ব্য়াটার ফিরেছেন কোনও রান না করেই। রোহিত-শুভমন-কোহলি খেলতে না পারলে, ভারতের রক্তচাপ বেড়ে যেত। কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি ও নান্দ্রে বার্গারের পেস আক্রমণ বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল। তিন পেসারই তিন উইকেট করে পেয়েছেন। মহম্মদ সিরাজ প্রথম ইনিংসে ঠিক যেটা করেছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে সেটাই করলেন বুম...বুম...বুমরা। তিনিও তুলে নিলেন ছয় উইকেট। ১৩.৫ ওভার বল করে ৬১ রান দেন দেশের এক নম্বর পেসার। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা প্রথম ইনিংসের মতো এতটাও শোচনীয় হয়নি। তারা ১৫৩ রান তুলতে পেরেছে। সৌজন্য়ে আইদেন মারক্রমের লড়াকু সেঞ্চুরি। ১০৩ বলে তিনি যদি ১০৬ রান না করতে পারতেন, তাহলে প্রোটিয়াদের ফের একবার চোখের জল বেরিয়ে যেত। তিনি তিন অঙ্কের রান করেছেন ঠিকই। তবে গোটা দলই বুমরার আগুনে পুড়েছে। মাত্র তিনজন ব্য়াটারই দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন। মুকেশ কুমার নেন দুই উইকেট। একটি করে উইকেট নেন প্রসিধ কৃষ্ণা ও সিরাজ।
ভারতের কেপটাউন টেস্ট জিততে গেলে দরকার ছিল ৭৯ রান। দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও রোহিত শর্মা ঠিক করে নিয়েছিলেন যে, তাঁরা ভুলে যাবেন যে, তাঁদের এই ক'টি রান করার জন্য হাতে তিনদিনেরও বেশি সময় আছে। রোহিত-যশস্বী ভেবেই নিয়েছিলেন যে, যতটা পারবেন টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সেরে নেবেন। জুনিয়র-সিনিয়র মিলে মারকাটারি মেজাজে রান তাড়া শুরু করেছিলেন। ধরাধরির কোনও গল্পই ছিল না। যশস্বী ছিলেন একেবারে আগ্রাসী মেজাজে। ছয় ওভারের মধ্যে তাঁরা তুলে ফেলেন ৪৪ রান। যশস্বী ২৩ বলের ঝোড়ো ২৮ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান। মেরেছিলেন ছ'টি চারও। বার্গারের বলে স্টাবসের হাতে তুলে দেন ক্যাচ। এরপর তিনে নেমে শুভমন গিল ১১ বলে ১০ রান করে রাবাডার বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৯ ওভারের মধ্যে ৫৭ রানে ভারতের প্রথম দুই উইকেট চলে যায়। চারে নামেন বিরাট কোহলি। ১১ বলে ১২ করে আউট হন তিনি। জানসেনের বাইরের দিকের বলে মারতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। পাঁচে নামেন শ্রেয়স আইয়ার। তখন ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল চার রান। শ্রেয়স চার মেরেই ভারতকে জিতিয়ে দেন। রোহিত অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ১৭ রানে। ভারত কেপটাউন টেস্ট জিতে নেয় সাত উইকেটে। অধরাই থেকে গেল মাধুরী! ১৯৯২ সাল থেকে একই ট্র্যাডিশন বজায় রাখল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এখনও পর্যন্ত টেস্ট সিরিজ জেতা হল না টিম ইন্ডিয়ার।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন